তারপর প্রায় দু'দশক সময় কেটে গিয়েছে। এর মধ্যেই নাদনঘাটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে সুমিতার।
তবুও মঙ্গলবার বেলা গড়াতেই টিভিতে, বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে তাঁর বীভৎস পরিণতি যখনই জানতে পেরেছেন নাদনঘাটের মানুষ, চমকে উঠেছেন, শিউড়ে উঠেছেন তাঁরা।
আর এই ঘটনা সবথেকে বেশি যাঁকে নাড়া দিয়েছে, তিনি সুদীপ্ত ঘোষ। এখন তিনি প্রৌঢ়। কিন্তু, ২০০৪ সালে এই সুদীপ্তই বিয়ে করেছিলেন সুমিতাকে। বউ হয়ে তাঁর সঙ্গে সংসার করতে এসেছিলেন সুমিতা। আজ, হঠাৎ সেই দিনগুলো ভীষণ মনে পড়ছে সুদীপ্তর।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আইনত নিহত সুমিতা ঘোষ হলেন সুদীপ্তর প্রাক্তন স্ত্রী। আসলে বিয়ের পর প্রথম প্রথম সবকিছু ঠিকই ছিল। মধুর সম্পর্ক ছিল তরুণ দম্পতির মধ্যে। সুদীপ্ত কর্মসূত্রে বেশিরভাগ সময়টাই বাইরে থাকতেন। সুমিতাও খুব একটা শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন না। তারপরও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি ক্রমশ বাড়তে থাকে। শেষমেশ তা অসহনীয় হয়ে ওঠে। যার জেরে ২০১৭-১৮ সাল নাগাদ তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
সেই ঘটনার পর সুদীপ্ত আর সুমিতার জীবনের পথ চিরকালের মতো আলাদা হয়ে যায়। কেউ আর কারও খোঁজ রাখতেন না। কিন্তু, মঙ্গলবার সুমিতার ট্রলিবন্দি খণ্ডিত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছেন সুদীপ্ত। সত্যি বলতে কী, কিছুটা মুষড়েও পড়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, হলেও বা প্রাক্তন! কিন্তু, একটা সময় তো তাঁরা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। সেই মানুষটার এমন ভয়াবহ পরিণতি কি মেনে নেওয়া যায়? বস্তুত, কোনও মানুষকেই কি কোনও সুস্থ, স্বাভাবিক ও সভ্য মানুষ - এভাবে খুন করতে পারে? কার্যত সেই প্রশ্নই তুলেছেন সুদীপ্ত। জানিয়েছেন, সুমিতার যে এমন পরিণতি হতে পারে, তা তিনি কখনও কল্পনাও করতে পারেননি।
তবে, সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে রাজি হননি সুদীপ্ত। তাঁর মন যে ভারাক্রান্ত, সেটা তাঁর অভিব্যাক্তি থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, খুব শান্ত আর ধীর গলায় জবাব দিয়েছেন, তাঁদের 'ডিভোর্স হয়েছিল, কিন্ত খারাপ তো লাগবেই!'
একইভাবে এই ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাটের ওই গ্রামেও যেন এক অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে। বাসিন্দারা মুখে খুব বেশি কিছু বলতে না চাইলেও, তাঁরা কেউই একটা সময় গ্রামে বিয়ে করে আসা এক বধূর এই ভয়ঙ্কর ও নির্মম পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন