আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বক্তব্য অনেক কিছু পরিষ্কার করলেও বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে বেধড়ক মারধর করে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে। তিনি আদালতে বারবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এত বড় ঘটনায় সঞ্জয় বা তাঁর আইনজীবী কখনোই অন্য কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেননি।
সঞ্জয়ের বক্তব্যের একটি বড় অস্পষ্টতা হলো, তিনি কেন গভীর রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন? কার নির্দেশে তিনি সেই রাতে হাসপাতালে যান? তাঁর অভিযোগ সাদা কাগজে সই এবং পুলিশি অত্যাচার নিয়ে, কিন্তু পুরো ঘটনার পেছনে থাকা প্রকৃত তথ্য তিনি কখনো প্রকাশ করেননি।
সঞ্জয় যেভাবে হাসপাতালের সেমিনার রুমে ঢুকে ধর্ষণ এবং খুন ঘটিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে এলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এত বড় একটি হাসপাতালে সিসিটিভি এবং নিরাপত্তার মাঝেও কীভাবে এই ঘটনা ঘটল? সঞ্জয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি নির্দোষ। কিন্তু তা হলে পুরো ঘটনার দায় কার ওপর বর্তায়?
তদন্তে উঠে এসেছে, সঞ্জয় গভীর রাতে আরজি কর হাসপাতালে যান এবং সেমিনার রুমে ঢুকে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করেন। কিন্তু এত বড় একটি ঘটনার পেছনে কি শুধুমাত্র সঞ্জয় একা ছিল? তদন্তে সঠিকভাবে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয়নি বলেই প্রশ্ন উঠছে।
এমন একটি ঘটনায় সাধারণত চক্রান্তের গন্ধ থাকে। প্রশ্ন হলো, সঞ্জয় বা তাঁর আইনজীবী কেন একবারের জন্যেও অন্য কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেননি? কার নির্দেশে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, এবং এই কাজ করার জন্য কীভাবে সাহস পেলেন-এসব প্রশ্ন উত্তরহীন।
গভীর রাতে হাসপাতাল প্রবেশ:
সঞ্জয় কীভাবে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে পারলেন? তার আগে কি কেউ তাঁকে সাহায্য করেছিল?
সিসিটিভি ফুটেজ:
তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ কী বলছে? সেখানে সঞ্জয়ের উপস্থিতি মাত্র ৩ বার, বাকি ৬৫ বার যে কয়েক জন একই যায়গায় ঘোরাফেরা করল তাঁরা কারা, একই সময়ে তাঁরা কি করছিলেন ওখানে?
হাসপাতালের নিরাপত্তা:
এত বড় একটি হাসপাতালে একজন অপরিচিত ব্যক্তি কীভাবে নির্দ্বিধায় সেমিনার রুমে ঢুকে এমন একটি ঘটনা ঘটিয়ে চলে এলেন? কেউ কিছু বুঝতেই পারলেন না!
পুলিশ কেন ঘুষ দিতে চাইল নির্যাতিতার বাবা মাকে? একজন সিভিক ভলেন্টিয়ারকে বাঁচাতে?
নির্যাতিতার কাকা বলেন, "আরজি কর হাসপাতালের বেশ কিছু চিকিৎসক আমার দাদা-বৌদিকে আটকে রেখেছিলেন । সাদা কাগজে সই করতে চাপ দিয়েছিলেন। আমি ওই সাদা কাগজ ছিঁড়ে দিয়েছি।" নির্যাতিতার বাবার দাবি, কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল প্রথম থেকেই মিথ্যা কথা বলে আসছেন। শুধু তাই নয়, ডিসি নর্থ টাকা দিতে চেয়েছিলেন বলেও দাবি পরিবারের।
সঞ্জয় আদালতে বারবার নিজের নির্দোষতার কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি কোনো বিকল্প ব্যাখ্যা দিতে পারেননি যে কীভাবে ঘটনাটি ঘটল। এমনকি তিনি কখনোই অন্য কারও নাম টেনে আনেননি। সঞ্জয়ের অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে মারধর করে জোর করে সাদা কাগজে সই করিয়েছে। তবে নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগও কম গুরুতর নয়। পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, পুলিশ তাঁদের উপরও চাপ সৃষ্টি করেছিল সাদা কাগজে সই করতে!
১) সঞ্জয়ের অভিযোগ এবং নির্যাতিতার পরিবারের বক্তব্যে মিল পাওয়া যাচ্ছে।
২) সঞ্জয়ের বক্তব্যে এমন কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে, যা নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
৩) পুলিশের কার্যকলাপ এবং তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
বিচারক সঞ্জয়ের বক্তব্য শোনার পর বলেন, ''আপনার বক্তব্য আগেও শোনা হয়েছে। যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে, যা আপনার বিরুদ্ধে যায়।'' তবে সঞ্জয়ের বক্তব্য তদন্তের প্রক্রিয়া এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। তদন্তের এই অস্পষ্টতাগুলো দূর করতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি উঠেছে। এই ধরনের একটি স্পর্শকাতর মামলায় সমস্ত তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলেই আমার বিশ্বাস।
সঞ্জয়ের বক্তব্যে যে অস্পষ্টতা রয়েছে, তা তদন্তের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আদালতের দায়িত্ব হলো, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া। তবে এই মামলায় যে সব প্রশ্ন এখনও উত্তরহীন, তা সমাধান না হলে পুরো ঘটনার প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হবে না এটা বলাই বাহুল্য!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন