যখন থেকে জঙ্গি গোষ্ঠী বিএনপি-জামাত ইসলামি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়া হিযবুত তেহেরির (Hizb ut-Tahrir)- এর হাতে শাসনক্ষমতা এসেছে,তখন থেকেই বাংলাদেশের সিনেমা জগত ঢালিউডের কপাল পুড়েছে । কারন ইতিমধ্যেই সিনেমাকে শিল্পের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে কট্টর ইসলামি মৌলবাদী মহম্মদ ইউনুসের সরকার । সিনেমাকে “হারাম” ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করার দাবিও অল্পবিস্তর উঠতে শুরু হয়েছে । এনিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত ঢাকা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত অভিনেতা-অভিনেত্রী,পরিচালক-প্রযোজক ও শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা । তবে তারা ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন । কিন্তু দিন কয়েক আগে দেশের একটা বাইক শোরুম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হিযবুত তেহেরির বাঞ্চাল করে দেওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন চিত্রনায়িকা পরীমণি । তিনি সরাসরি মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন । আর এতেই ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে যান অভিনেত্রী । নিরীহ সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে ঠিক যে কায়দায় মিথ্যা অভিযোগে কারাদন্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে,এখন একই কায়দায় চিত্রনায়িকা পরীমণিকে জেলে ঢোকানোর ষড়যন্ত্র চলছে ।
ইতিমধ্যেই পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বাংলাদেশের আদালত। রবিবার (২৬ জানুয়ারী) ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে । অভিনেত্রীর আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জশিট গঠন করার আদেশ দেওয়া হয়েছে । এদিকে পরীমণির বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হলে কী সাজা হবে নায়িকার? সে নিয়েও চলছে জোর চর্চা। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম মহম্মদ সোহেল। তিনি
বলেন,’পরীমণির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩২৩ ও ৫০৬ নম্বর ধারায় চার্জশিট গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ আদালতে প্রমাণ হলে অভিনেত্রীর সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড হবে ।’ তিনি আরও বলেন,’৩২৩ ধারার স্বেচ্ছায় আঘাত করার অপরাধটি প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১ বছর আর অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন প্রমাণিত করতে পারলে সর্বোচ্চ ২ বছরের সাজা হতে পারে পরীমণির। তবে আদালত চাইলে শাস্তি কমাতে পারেন। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ শাস্তিই চাইব।’
কি অভিযোগ পরীমণির বিরুদ্ধে ?
আসলে, ২০২১ সালের ৬ জুলাই ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসানের আদালতে পরীমণিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বোটক্লাবের সভাপতি ব্যবসায়ী জামাত ইসলামি ক্যাডার নাসির উদ্দিন মাহমুদ । সেই মামলায় আদালতে পরীমণির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন আইনজীবী সোহেল। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে পরীমণির পক্ষের আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী আদালতে সময় আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করে চার্জ গঠনের আদেশ দেন এবং আগামী ২০ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন। পরীমণির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, অভিনেত্রী ও তার সহযোগী ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি ও জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিম অ্যালকোহল সেবনে অভ্যস্ত। তারা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন নামীদামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেননি। মূল্য দাবি করলে পরীমণি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলার হয়রানির ভয় দেখান।
পরীমণির বিরুদ্ধে করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ৯ জুন রাত ১২টার পর পরীমণি তার সহযোগীদের নিয়ে বোটক্লাবে ঢোকেন। ওই সময় বোটক্লাবের সভাপতি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন ও তার সহযোগী শাহ শহিদুল আলম ক্লাব ত্যাগ করছিলেন। ওইসময় পরীমণি উদ্দেশ্যমূলকভাবে নাসির ও আলমকে ডাক দেন। তাদের সঙ্গে কিছু সময় বসারও অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে পরীমণি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নাসির উদ্দিনকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন এবং একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনামূল্যে পার্সেল দেওয়ার জন্য চাপ দেন। নাসির উদ্দিন এতে রাজি না হওয়ায় পরীমণি তাকে গালমন্দ করেন বলে অভিযোগ । ব্যবসায়ীর দাবি, বচসা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, পরীমণি একটি কাচের গ্লাস ছুড়ে মারেন। তা গিয়ে লাগে নাসিরের মাথায় ও বুকে লাগে। এই ঘটনাকে হত্যার চেষ্টা হিসাবেই দেখছেন ব্যবসায়ী। অভিযোগ হয়েছে সেই মর্মেই।পরীমণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’কে জানান, রবিবার নাসির উদ্দিন মাহমুদের দায়ের করা মারধর ও হত্যার হুমকির মামলায় শুনানি ছিল। পরীমণি তরফে শুনানির জন্য সময় চেয়ে তিনি আবেদন করেন। আদালত ওই আবেদন নাকচ করে পরীমণির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন। নীলাঞ্জনা বলেন, “আদালতে হাজিরা না দেওয়ায় পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।”
আরও অভিযোগ, এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমনি সাভার থানায় বাদী নাসির উদ্দিনসহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে মামলা করেন।
এই ঘটনার পরপরই মাদক পাচার মামলায় জেলে গেছিলেন পরীমণি। ২০২১ সালের ৪ঠা আগস্ট পরীমনির ঢাকার বাড়িতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের অভিযান শেষে অনুমোদনহীন মিনিবার পরিচালনা ও মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগে তাকে আটক করেছিল। আটক করার পর প্রথম দফায় ৪ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় ২ দিনের রিমান্ড দেয় আদালত। টানা ২৬ দিন জেলে থাকার পর ৩১ আগস্ট ২০২১ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ তাকে জামিন দেন।
পরীমণি চলতি সপ্তাহে একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে গিয়ে ইসলামি সংগঠনগুলির বাধাপ্রাপ্ত হন। ক্ষোভে তিনি লিখেছিলেন, “এতো চুপ করে থাকা যায় নাকি!!! পরাধীন মনে হচ্ছে। শিল্পীদের এতো বাধা কেন আসবে!? Insecure feel হচ্ছে ! এমন স্বাধীন দেশে নিরাপদ নই কেন আমরা!” এই পোস্ট করার পর পরীমণির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রাজনীতিক-ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে করা একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। অপরাধ প্রমণিত হলে নায়িকার সর্বোচ্চ তিন বছরের সাজা হতে পারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন