আরজি কর হাসপাতালে (RG Kar Medical College and Hospital) নির্যাতিতা জুনিয়র চিকিৎসকের ওপর কী নির্মম অত্যাচার চলেছিল, তা প্রকাশ্যে মাল্টি ইনস্টিটিউশনাল মেডিকেল বোর্ড অর্থাৎ এমআইএমবি-র রিপোর্টে। জানা যাচ্ছে, নিহত তরুণীর গোপনাঙ্গে যে আঘাতের চিহ্ন ছিল সেটি কোনও ভারী ভোঁতা বস্তুর জন্য হয়ছিল।
ফলে ওই বস্তুটি শরীরের মধ্যে ঢোকানো হয়ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই রিপোর্ট সিবিআইয়ের কাছে পাঠিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। আর এই তথ্য সামনে আসার পরেই আরজি কর কাণ্ডের সঙ্গে ১২ বছর পুরোনো নির্ভয়াকাণ্ডের প্রসঙ্গ উঠে আসছে। নির্ভয়াকাণ্ডে অভিযুক্তরা নির্যাতিতা তরুণীর দেহে লোহার রড ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে আরজি কর কাণ্ডের ভয়াবহতা কতটা ছিল উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ড নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু করলে নির্যাতিতার ময়না তদন্তের রিপোর্ট খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার জন্য দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ফরেন্সিক মেডিসিন, স্ত্রীরোগ, অস্থি, শল্য ও চক্ষু বিভাগের ১১ জন চিকিৎসকদের নিয়ে এই বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ডের প্রতিনিধিত্ব করেন এইমসের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর আদর্শ কুমার। তাঁর নেতৃত্বে এই বোর্ড ৪ বার বৈঠক করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর এই বোর্ড একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিল সিবিআইকে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নির্যাতিতার যোনিতে বলপ্রয়োগে প্রবেশ ঘটেছিল, তবে সেখানে বীর্যের কোনও নমুনা পাওয়া যায়নি। তাদের মতে, পুরুষাঙ্গ ছাড়া অন্য কোনও ভোঁতা বস্তু কিংবা কন্ডোম ব্যবহারের কারণেও এমনটি হতে পারে। এছাড়া, নির্যাতিতার শরীরে কামড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের লালার নমুনার সঙ্গে মিলে গিয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
নির্যাতিতা মৃত্যুর আগে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন সেই সাক্ষ্যই দেয়। শ্বাসরোধের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। শ্বাসরোধের ফলে নির্যাতিতার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গিয়েছিল এবং মৃত্যুর আগে তিনি ছটফট করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের চারতলায় সেমিনার রুমে উদ্ধার হয়েছিল মহিলা জুনিয়র চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন দেহ। সেই ঘটনার পর শহর তথা রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ চলেছে। বিক্ষোভকারীদের চাপে শেষমেশ এই ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআইকে। কিন্তু সেই ঘটনার বেশ কয়েকমাস কেটে যাওয়ার পর এখনও অধরা নির্যাতিতার মৃত্যুর আসল কারণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ঘটনাটি এক জনের পক্ষেও ঘটানো সম্ভব, তবে আরও প্রমাণ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘটনাস্থলের ফরেন্সিক বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য প্রমাণের সঙ্গে মিলিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে।
পাশাপাশি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ময়নাতদন্ত চলাকালীন কিছু নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছিল। অনেকেই ময়নাতদন্ত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন এবং ব্যক্তিগত মোবাইলে ছবি তুলছিলেন, যা সম্পূর্ণ নিয়মবিরুদ্ধ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন