বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকিয়ে পরিচপত্র তৈরি করে দিয়ে জনবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ তুলে আসছে বিজেপি । তাদের এই অভিযোগ যে নিছক অমূলক নয় তার প্রমাণ পাওয়া গেল মালদা জেলায় । সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মালদা (Malda) জেলার রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের (Rashidabad GP) প্রধান লাভলি খাতুন (Lovely Khatun) আদপে একজন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী । তিনি অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে পড়েছেন বলে অভিযোগ । শুধু নিজের নামই নয়, এদেশে ঢোকার পর বাবার নাম পর্যন্ত বদলে ফেলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । আর তাকে এই সমস্ত বেআইনি কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠছে হরিশ্চন্দ্রপুরের দাপুটে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ।
রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ ওই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর পঞ্চায়েত প্রধান হয়ে যাওয়ার ঘটনায় মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে তুলোধুনো করেছেন । ওই বাংলাদেশি মহিলার প্রকৃত নাম এবং কোন সালে তিনি ভারতে অনুপ্রবেশ করে শাসকদলের একজন নেত্রী হয়ে উঠেছিলেন,তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি এক্স-এ লিখেছেন,’লাভলী খাতুনকে মালদার রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান করেছে তৃণমূল কংগ্রেস । তবে, তার আসল নাম নাসিয়া শেখ(Nasia Sheikh) এবং তিনি আদপে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ৷ তিনি ২০১৫ সালে ভারতীয় ভোটার আইডি এবং ২০১৮ সালে জন্ম শংসাপত্র পেয়েছিলেন৷ দাবি করা হয়েছে তার বাবার নাম শেখ মুস্তফা(Sheikh Mustafa) নয় ৷ তবে জামিল বিশ্বাস (Jamil Biswas) ।’ দিলীপবাবু আরও লিখেছেন,’এরকম অনেক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে নেতা হয়েছেন। দলটি এই ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গকে “পশ্চিম বাংলাদেশে” পরিণত করার লক্ষ্য রাখে। জনগণ সতর্ক না হলে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবে পরিণত হতে পারে।’
1.1 Malda's Rashidabad GP,Lovely Khatun has been made Panchayat Pradhan by TMC.However, her real name is Nasia Sheikh & intruder from Bangladesh.She obtained Indian voter ID in 2015 & birth certificate in 2018.Her father's name is not Sheikh Mustafa, as claimed, but Jamil Biswas. pic.twitter.com/ouqb0SZQbx
— Dilip Ghosh (Modi Ka Parivar) (@DilipGhoshBJP) December 30, 2024
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলাদেশী লাভলি খাতুন ওরফে নাসিয়া শেখকে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস । তিনি জিতেও যান । তাকে রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানও করে দেওয়া হয় । কিন্তু তার নাগরিকত্ব নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দেন তাঁর প্রতিপক্ষ রেহানা সুলতানা । তিনি কলকাতা হাই কোর্টে একটা মামলা দায়ের করে জানান যে লাভলি খাতুন আদপে একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী । পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই অবৈধভাবে তিনি ভারতে অনুপ্রবেশ করেছেন । স্থানীয় শুভানুধ্যায়ীদের কল্যানে ২০১৫ সালে তার ভোটার আইডি তৈরি হয়ে যায় । পরে ভুয়া জন্মসংসাপত্রও তৈরি করে দেওয়া হয় তার । ২০১৮ সালে ইস্যু হয় তার ভুয়া জন্মসংসাপত্র । এমনকি ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রারেও শেখ মুস্তাফার পরিবারের লাভলির কোনও অস্তিত্ব নেই। তার জাল ওবিসি শংসাপত্র পর্যন্ত করে দেওয়া হয়েছে ।
এদিকে হাইকোর্টে মামলা হলেও এখনও এই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি । কারন আদালত একাধিকবার লাভলি খাতুন ওরফে নাসিয়া শেখকে তলব করা হলেও তিনি হাজিরা দেননি বলে অভিযোগ । কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি এই বিষয়ে চাঁচলের এসডিও-কে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন । লাভলির ভুয়া বাবা শেখ মুস্তাফাকে হাইকোর্টে তলবও করা হয়। কিন্তু বারবার তলব করা হলেও তিনিও যথারীতি আদালতে হাজিরা দেননি । বিতর্কটি নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস ধরে জলঘোলা চললেও মমতা ব্যানার্জি এখন ওই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মহিলাকে পঞ্চায়েতের প্রধান করেই রেখে দিয়েছেন !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন