আগামী ২ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ইসকন সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ওরফে চিন্ময় প্রভুর জামিন শুনানি রয়েছে। কিন্তু ওই দিন যাতে বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র জামিন না পান তার জন্য চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা বিচারক আসাদুজ্জামানকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
সূত্রের খবর, প্রধান বিচারপতি চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা বিচারক আসাদুজ্জামানকে জানিয়েছেন, 'মোল্লা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনও মতেই চিন্ময় প্রভুকে জেলের বাইরে বের হতে দেওয়া যাবে না। ওই নির্দেশ মানতে হবে। যার আদালতে চিন্ময় প্রভুর জামিন শুনানি হওয়ার কথা সেই বিচারক সাইফুল ইসলামের এজলাস থেকে প্রয়োজনে মামলা জামায়াত ইসলামি ঘনিষ্ঠ কোনও বিচারকের এজলাসে পাঠাতে হবে।' কোনও মামলার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এমন হস্তক্ষেপ করতে পারেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শেখ হাসিনা জমানার অবসানের পরেই বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দুদের ওপর বেলাগাম সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। বাড়ি-ঘর-ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি হিন্দুদের মন্দিরগুলিতেও ব্যাপক ভাঙচুর চলছে। ওই নির্যাতনের বিরুদ্ধেই সরব হয়েছিলেন চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের প্রধান তথা ইসকন সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভু। নিপীড়িত হিন্দুদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। আর হিন্দু নির্যাতন নিয়ে সরব হওয়ায় মোল্লা মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের রাজরোষে পড়তে হয় তাঁকে। গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে গ্রেফতার করা হয় চিন্ময় প্রভুকে। ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে তাঁকে পেশ করা হলে জামায়াত ইসলামীর সদস্য তথা চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম জেল হেফাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে ৩ ডিসেম্বর জামিন আর্জির শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তার আগেই চিন্ময় প্রভুর আইনজীবী শুভাশিস শর্মা-সহ ৭০ জন হিন্দু আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। এমনকি বেশ কয়েকজন হিন্দু আইনজীবীর চেম্বারেও ভাঙচুর চালানো হয়। চট্টগ্রাম আদালতের জামায়াত ইসলামি সমর্থক আইনজীবীরা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মিছিলও করেন। ফলে চিন্ময় প্রভুর হয়ে কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি। মওকা পেয়েই হিন্দুদের রক্ষাকর্তার জামিন শুনানি এক মাস পিছিয়ে দেন বিচারক। এর পরে ঢাকা থেকে প্রবীণ আইনজীবী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চিন্ময় প্রভুর জামিন শুনানি এগিয়ে আনার আর্জি নিয়ে গত ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু ছুটকো কারণ দেখিয়ে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক।
সূত্রের খবর, আগামী ২ জানুয়ারি চিন্ময় প্রভুর জামিন আর্জির শুনানিতে তাঁর হয়ে কোনও আইনজীবীকে লড়তে যাতে বাধা দেওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা বিচারককে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি নিজেও এ বিষয়ে শিশির মনি-সহ সুপ্রিম কোর্টের জামায়াত ইসলামি সমর্থক আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, চিন্ময় প্রভুর হয়ে কাউকে লড়তে বাধা দেওয়া হবে না। তবে তার জামিন যাতে মঞ্জুর না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এর পরেই অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। তারাও জামায়াত সমর্থক আইনজীবীদের দাবির সারবত্তা রয়েছে বলে জানান। এর পরেই চট্টগ্রামের জেলা ও দাযরা বিচারক আসাদুজ্জামানকে জরুরি তলব করে ২ জানুয়ারি চিন্ময় প্রভুর জামিন আর্জি খারিজের নির্দেশ দিয়েছেন 'রাজাকার' পরিবারের সন্তান হিসাবে পরিচিত প্রধান বিচারপতি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন