রবিবার কলকাতার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে একটা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় কলকাতা পুরসভার মেয়র তথা মমতা ব্যানার্জির কেবিনেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন,’আমরা এমন এক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, যে সম্প্রদায় বাংলায় ৩৩ শতাংশ, এবং গোটা ভারতে আমরা মাত্র ১৭ শতাংশ । আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বলা হয়৷ কিন্তু আমরা নিজেদেরকে সংখ্যালঘু ভাবি না৷ যদি আমাদের উপর আল্লাহর রহমত থাকে, আমাদের সঠিক তালিম থাকে তাহলে আমরা একদিন সংখ্যালঘু থেকে সংখ্যাগুরু হতে পারি । যদি আল্লাহর মেহেরবানী হয় তাহলে আমরা নিজেদের তাকতে এটা অর্জন করব ।’ এদিকে ফিরহাদের এই মন্তব্যের পর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ একযোগে সমালোচনা করেছেন । রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি তরুনজ্যোতি তিওয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের সতর্ক করে বলেছেন যে এরপরেও ফিরহাদ হাকিমের ইঙ্গিত হিন্দুরা যদি এখনো বুঝতে না পারে তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ ক্ষমা করবে না।
এক্স-এ তরুনজ্যোতি এই বিষয়ে লিখেছেন,’ফিরহাদ হাকিমের করা সম্প্রতি কিছু মন্তব্য অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং সেটা যদি হিন্দুরা বুঝে না পারে তাহলে তাদেরকে ভবিষ্যৎ ক্ষমা করবে না। Direct Action Day বা ১৯৪৬ সালের গ্রেট কলকাতা কিলিংসের নৃশংস স্মৃতি আজও বেদনাদায়ক। সেই সময়ে মুসলিম লীগ কর্তৃক সংগঠিত সহিংসতা এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাম্প্রদায়িক নেতৃত্ব কলকাতাকে রক্তাক্ত করেছিল। বহু হিন্দু প্রাণ হারিয়েছিল, আর কংগ্রেসের নীরব ভূমিকা পরিস্থিতি আরও জটিল করেছিল। গোপাল মুখার্জি ওরফে গোপাল পাঁঠা তখন সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলে হিন্দু সমাজকে রক্ষা করেছিলেন। আজ, সেই অতীত ইতিহাস আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে কিছু সাম্প্রতিক ঘটনা।’
তিনি লিখেছেন,’সম্প্রতি কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের একটি বিতর্কিত মন্তব্য সামনে এসেছে। কিছু তৃণমূল নেতা দাবি করছেন যে, তার বক্তব্য মুসলমান সমাজের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে। তবে প্রশ্ন উঠছে, এই বক্তব্যে কী ধরনের শিক্ষা রয়েছে যেখানে “সংখ্যালঘু থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া”র কথা বলা হয়, অথচ মুসলমান সমাজের জীবনমান, কর্মসংস্থান বা শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। এটি কি আসলে শিক্ষার বার্তা, নাকি ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা?’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু নির্যাতনের প্রেক্ষাপটের কথা উল্লেখ করে তিন লিখেছেন,’পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, এবং সেখানে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি যে আচরণ করা হয়, তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ নিশ্চয়ই অবগত। হিন্দুদের ধর্মীয় নিপীড়ন, জমি দখল, এবং প্রতিনিয়ত নির্যাতনের ঘটনা আজকের বাস্তবতা। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিতে পারলে বুঝতে পারবে ফিরহাদ হাকিম সহ তৃণমূলের অন্যান্য নেতৃত্ব কিসের বার্তা দিচ্ছে। রাজ্যের একজন মন্ত্রী এবং কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিমের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে চাই।। কেন্দ্রে ইন্ডি জোটের সদস্য দল যারা আছে অর্থাৎ কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট তাদের জোটসঙ্গী তৃণমূলের একজন মন্ত্রীর এই বক্তব্য সম্পর্কে কি বলে সেটাও জানতে চাই।
"আল্লাহর রহমতে, আমরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যায় পরিণত হব।" : কলকাতার মেয়র ও তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন৷#WestBengal | #FiradHakim pic.twitter.com/AMXRtujwTw
— NewsTapবাংলা (@NewsTapBangla) December 15, 2024
এরাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মুসলিম নেতাদের বক্তব্য উল্লেখ করে তরুনজ্যোতি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় তৃণমূল নেতারা যে বক্তব্য রাখছেন সেগুলো শুনে মনে হয় না কোন রাজনৈতিক নেতা বলছেন, ধর্মান্ধ কট্টরপন্থী কোন মৌলভীর বক্তৃতা মনে হচ্ছে।। এই ধরনের মন্তব্য যদি কোন হিন্দু নেতা দিত তাহলে কি হতো ? বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের “সেকুলারিজমের মশাল” হাতে নিয়ে পথে নামে, কিন্তু সেই মশালটি শুধু একদিকেই আলো দেয়। তাদের সেকুলারিজম এমন এক চশমা, যেটা দিয়ে শুধু হিন্দুদের ভুল দেখা যায়, আর অন্য সম্প্রদায়ের ভুলগুলো কেমন জানি অদৃশ্য হয়ে যায়। মন্দিরের ঘণ্টার শব্দে তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা আহত হয়, অথচ মসজিদের মাইকের আওয়াজ তাদের জন্য “সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য”! ধর্মনিরপেক্ষতার নামে তারা এমন এক খেলা খেলছে, যেখানে হিন্দুদের অধিকার রক্ষার কথা বললেই আপনি “সংকীর্ণ” আর অন্য সম্প্রদায়ের নামে চুপ থাকলেই আপনি “সেকুলার”। এ যেন “ধর্মনিরপেক্ষতার মেকি কারখানা” যা হিন্দুদের আক্রমণেই সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল!’ সবশেষে তিনি বলেছেন,’ওই সেকুলারিজমের মশালধারীরা কলকাতার মেয়রের এই বক্তব্য নিয়ে কি বলে তা শোনার ইচ্ছা থাকলো।’
প্রসঙ্গত,এর আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন ফিরহাদ হামিক । গত জুলাই মাসে কলকাতার ধন ধান্য অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘সর্বভারতীয় কোরান প্রতিযোগিতার‘ সময় ফিরহাদ হাতেম বলেছিলেন, ‘যারা দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে, যারা ইসলাম নিয়ে জন্মায়নি, তাদেরও দাওয়াত-এ ইসলাম, অর্থাৎ ইসলামের দাওয়াত দিয়ে তাদের মধ্যে ঈমান নিয়ে আসলে এটা আল্লাহতালাকে খুশি করা হবে। ইসলামকে তাদের মধ্যে ছড়াতে হবে । শক্তিশালী মনে হয়, যখন সবাই এখানে টুপি পরে বসে আছে, হাজার হাজার মানুষ বসে আছে, তখন মনে হয় ইসলামের ঐক্য একটা জায়গায় আছে । যেখানে আমাদের কেউ কোনদিন দাবাতে(দমাতে) পারবেনা ।’ তার আগে পশ্চিমবঙ্গের অর্ধেকের বেশি মানুষ উর্দুতে কথা বললে তিনি খুশি হবে বলে জানিয়েছিলেন । শুভেন্দু অধিকারী তার এই ধরনের মন্তব্যকে ‘ভয়ঙ্কর কথাকার্তা’ বলে অভিহিত করেন । ফিরহাদের এই প্রকার মন্তব্যকে সুকান্ত মজুমদার সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উসকে দিয়ে একটি বিপজ্জনক এজেন্ডা ঠেলে দেওয়ার’ অভিযোগ করেন । দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া হল, ‘পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ বানানোর সুপারি নিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি ।’।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন