২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন দিল্লি এইমসে। ৯২ বছর বয়সে সেখানেই প্রয়াত হন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, রাত ৯.৫১ নাগাদ প্রয়াত হয়েছেন মনমোহন সিং। তারপর থেকেই স্মৃতিচারণ। কেউ বলছেন হারালেন পথপ্রদর্শককে। কেউ বলছেন মাথা থেকে সরে গেল বটবৃক্ষের ছায়া।
চিরকাল অমায়িক, শান্ত এবং দেশের রাজনীতিতে আমূলপরিবর্তনের পথপ্রদর্শক মনমোহনের কেমন ছিল রাজনীতিতে প্রবেশ?
তখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অর্থাৎ ইউজিসির চেয়ারম্যান ছিলেন মনমোহন সিং। নেদারল্যান্ডের একটি সম্মেলন থেকে দেশে ফিরেছেন সবে। সময়টা ১৯৯১। দেশের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে পিভি নরসিমহা রাও। অর্থনৈতিক-সহ একগুচ্ছ বিষয়ে দেশ তখন লড়াই করছে। অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে একদিন প্রায় মাঝরাতে মনমোহনকে ফোন করেছিলেন রাও-এর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি। মাঝরাতে ফোন করে জাগিয়ে বলেছিলেন, দেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নামের পাশেই পড়েছে সিলমোহর।
'স্ট্রিক্টলি পার্সোনাল: মনমোহন এবং গুরশরণ' বইয়ে তাঁর মেয়ে লিখেছেন, ওই মাঝরাতের ফোনে দেশের অর্থমন্ত্রীর পদ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে যেমন কথা হয়েছিল, তেমন মজার ছলে বলা হয়েছিল, তিনি যদি দেশের অর্থনীতির পরিস্থিতি কিছুটা সঠিক পথে আনতে পারেন, তাহলে কৃতিত্ব দাবি করবে সবাই, আর যদি পরিস্থিতি আরও হাতের বাইরে যায়, তাহলে পদ থেকে বরখাস্ত করা হবে মনমোহনকে। ২১ জুন, ১৯৯১, রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ নেন মনমোহন সিং। রাও-এর কিছুটা সময় লেগেছিল, মনমোহনকে দায়িত্ব দেওয়ার পর, তিনি সবকিছু ঠিক পথে করছেন কি না বুঝতে। যদিও সেই দ্বন্দ্ব দূর হয়েছিল অচিরেই। তাঁর হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে এল উদারীকরণ। বিশ্বের দ্বার খুলে গেল ভারতীয়দের সামনে। বলা যায় এ এক নয়া আর্থিক বিপ্লব। যার জনক ডঃ মনমোহন সিং।এরপর ভারতীয় রানীতিতে বহু টানাপোড়েন চলেছে। জন্ম নিয়েছে জোট সরকার। এনডিএ সরকারের পতনের পর ১৯৯৯ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সনিয়া গান্ধী বেছে নেন কংগ্রেসের প্রতি চির আস্থাশীল মনমোহন সিংকে। ২০০৭ সালে তাঁর আমলেই ভারতের জিডিপি সর্বোচ্চে ৯ শতাংশে পৌঁছায়। পৃথিবীর দ্বিতীয় দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি হিসেবে উঠে আসে ভারত। এই সরকার পাঁচ বছর অতিক্রম করে। ফের ২০০৯ সালে ইউপিএ জোট জিতে ক্ষমতায় ফিরলে ডঃ মনমোহনকেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসান সনিয়া। তবে, সমালোচনা হয় মনমোহনের। সনিয়া-রাহুলের 'কাঠপুতুল' বলে কটাক্ষে বিদ্ধ হন এই শিক্ষাবদ।
২০১৪ সালে ধরাশায়ী হয় মনমোহন সরকার। কিন্তু রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন তিনি। শেষে চলতি বছর সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হতে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন তিনি। তবে, শেষদিন পর্যন্ত হাত ছাড়েননি তিনি। সাংসদ হিসাবে শেষ ভাষণে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নোট বাতিলের নিন্দা করেছিলেন। ওই পদক্ষেপকে "সংগঠিত লুট এবং বৈধ লুণ্ঠন" বলে তোপ দেগেছিলেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন