সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি ইঙ্গিত করে যে সেমিনার কক্ষে যেখানে ভিকটিমের লাশ পাওয়া গেছে সেখানে লড়াইয়ের কোন চিহ্ন ছিল না। পরিবর্তে, রক্তের দাগ শুধুমাত্র গদিতে পাওয়া গেছে, বিশেষ করে শিকারের মাথা এবং তলপেটে।
আরজি কর-কাণ্ডের পর অনেকেই ঘটনাস্থল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। মহিলা চিকিৎসককে অন্য কোথাও ধর্ষণ-খুনের পর সেমিনার হলে ফেলে রেখে যাওয়া হয়ে থাকতে পারে বলেও দাবি করেছিল বিভিন্ন মহল। প্রশ্ন উঠছে, সিএফএসএল-এর রিপোর্ট সেই দাবিকেই ফের উস্কে দিল না তো? প্রসঙ্গত, গত ৯ অগস্ট আরজি করের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হল থেকে ওই মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সেই সময় কলকাতা পুলিশ তদন্তে নেমে ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করে। বেশ কিছু নথি, নির্যাতিতার আইডেন্টিটি কার্ড-সহ অন্তত ৪০টি জিনিস পাওয়া গিয়েছিল ঘটনাস্থল থেকে। তার মধ্যে অনেক কিছুই ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় সিএফএসএলে। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তেভার হাতে পায় সিবিআই। সিএফএসএল রিপোর্টের শুরুতেই বলা হয়েছে, তদন্তভার পাওয়ার পর গত ১৩ অগস্ট সিএফএসএলের সাহায্য চায় সিবিআই। সেই মতো ১৪ অগস্ট (দেহ উদ্ধারের পাঁচ দিন পর) সিএফএসএলের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন। তার ভিত্তিতেই এই রিপোর্ট।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাঠের পাটাতনের উপর ওই বিছানা ছাড়া সেমিনার হলে আর কোথাও কোনও দাগ মেলেনি। বিছানা থেকে যে অবস্থায় নির্যাতিতার দেহ মিলেছিল ছিল, তাতে তাঁর মাথা এবং পেটের কাছের কাপড় ছেঁড়া ছিল। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের জানিয়েছিলেন, রক্তের দাগ ছিল বলে ওই অংশের কাপড় কেটে নেওয়া হয়েছিল। সেই নমুনা সিএফএসএলে পাঠানোও হয়েছে। কিন্তু আততায়ীর সঙ্গে নির্যাতিতার ধস্তাধস্তি বা তাঁর প্রতিরোধের কোনও প্রমাণ মেলেনি। শুধু তা-ই নয়, অগোচরে আততায়ী সেমিনার হলে কী ভাবে প্রবেশ করলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে রিপোর্টে।
সিএফএসএলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, চারতলায় উঠে ওই সেমিনার হলে পৌঁছতে হলে একটি নার্সিং স্টেশন পেরিয়ে যেতে হয়। সেই নার্সিং স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। অর্থাৎ, সেখানে কোনও না কোনও নার্সের থাকা কথা। নার্সিং স্টেশনের পাশে সংকীর্ণ একটি করিডোর রয়েছে। সেখানেই পালমোনারি বিভাগের রেসপিরেটরি কেয়ার ইউনিট। সেটি পেরোলেই সেমিনার হল। অর্থাৎ ঘটনাস্থল। এ ছাড়াও রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেমিনার হলে ঢোকার মোট পাঁচটি দরজা। সব ক'টাই করিডোরের দিকে। হাসপাতাল কর্মীরাই জানিয়েছিলেন, শুধুমাত্র প্রথম দরজাটিই ব্যবহার করা যায় ভিতরে প্রবেশ বা বাইরে বেরোনোর জন্য। বাকিগুলি বন্ধই থাকে। এর ভিত্তিতেই রিপোর্টে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সকলের নজর এড়িয়ে নার্সিং স্টেশন পেরিয়ে সেমিনার হলে পৌঁছনোর সম্ভাবনা অত্যন্তই ক্ষীণ।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় সেখান থেকে কিছু নমুনাও সংগ্রহ করেছিলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সেমিনার হলে কাঠের পাটাতনের উপর একটি কাঠের টেবিলও ছিল। নীল রঙের একটি প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা ছিল সেটি। সেখান থেকে কয়েকটি লম্বা চুল পাওয়া গিয়েছে। লম্বা চুল পাওয়া গিয়েছে কাঠের পাটাতনের উপরে থাকা ওই বিছানা থেকেও। এ ছাড়াও কাঠের পাটাতনের পাশ থেকে মোবাইলের একটি ব্যাক কভারও মিলেছিল। আর পাওয়া গিয়েছিল কিছু ছেঁড়া কাগজপত্র। প্রশ্ন উঠছে, মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হওয়ার পাঁচ দিন পরেও কী ভাবে ঘটনাস্থলে মোবাইলের ব্যাক কভার বা ছেঁড়া কাগজপত্র পাওয়া গেল? কী ভাবে তা সকলের নজর এড়িয়ে গেল, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন