রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। শিক্ষার্থীদের মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্কের মোড়ে এলে তিনি ছিলেন সবার আগে। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করলেও সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁর এক হাতে ছিল লাঠি|
আবু সাঈদের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে। ছয় ভাই ও তিন বোন। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আবু সাঈদ সবার ছোট। তিনি স্থানীয় জুনুদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়েছিল। পরে ওই এলাকার খালাশপী বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর রংপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
দারিদ্র্যের কারণে তাঁর বড় ভাইবোনেরা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন কিন্তু তাঁরা সাঈদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন। সাঈদ সরকারি চাকরিতে যোগদানের স্বপ্ন দেখতেন। একটি চাকরি তাঁর পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। আর তাই তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের বুলেটে গতকাল তাঁর এবং তাঁর পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে যায়। বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের পর তাঁর সহকর্মীরা তাঁর গুলিবিদ্ধ লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা জানান, সাঈদ ইতিমধ্যেই মারা গেছেন।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাঁর পরিবারের মানুষদের ভাষ্য উঠে এসেছে। তাঁর ভাই রমজান বলেন, ‘সাঈদই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা। আমরা তাকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু সেসব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, তাঁদের বাবা অসুস্থ এবং শয্যাশায়ী। তিনি খুব কমই চিকিৎসা করাতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যা কিছু অর্জন করেছি তা আমরা তার শিক্ষার জন্য ব্যবহার করেছি।’ তিনি বলেই যাচ্ছিলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, একদিন সে সফল হবে এবং আমাদের ভালো দিন আসবে। কিন্তু পুলিশের বুলেট সব শেষ করে দিল।’
রংপুরের বাবনপুরে সাঈদের গ্রামের বাড়িতে এক বিষাদময় পরিবেশ বিরাজ করছে। কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না যে সাঈদ আর নেই। তার মা মনোয়ারা বেগম মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন এবং বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাঈদ তাঁর ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ছাত্র ছিলেন। সে ব্যবহারেও নম্র ও ভদ্র ছিলেন। তাঁর ভাইবোনদের মধ্যে তিনিই একমাত্র উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু আমাদের সবাইকে গভীরভাবে শোকাহত করেছে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন