Top News

গত ১৬ বছরে এবারের ছাত্র বিক্ষোভই কি সরকারকে সবচেয়ে বেশী নাড়া দিয়েছে?

 

শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মধ্যেই আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করেছে।

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার পর কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের পর বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের শেষে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে এবারের ঘটনাই ছিলো সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের, যা সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে চিন্তায় ফেলেছিলো বলে মনে করেন তারা। 

 চলতি মাসের শুরু থেকে ছাত্র বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করলেও ১৬ই জুলাই ছয় জনের মৃত্যুর পর ১৮ ও ১৯শে জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিবর্ষণ, শতাধিক মৃত্যু, বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন, এবং ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা সারাবিশ্বে তোলপাড় তৈরি করে।

 পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৯শে জুলাই শুক্রবার মধ্যরাতে সরকার কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসছে বলে সরকার থেকে বলা হলেও , প্রশ্ন উঠছে যে এবারের ঘটনাই আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদের শাসনকালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বা সরকারকে উদ্বেগে ফেলেছিলো কী-না। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘটনার ভয়াবহতা ও রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া থেকে এটা অনুমেয় যে ‘এবারই প্রথম সরকারের মধ্যে উদ্বেগ তৈরির’ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন তারা।

যদিও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলছেন সরকার উদ্বিগ্ন হয়েছে 'দেশ আক্রান্ত হয়েছে বলে', তাই তবে এখানে ভয় পাওয়ার বা চিন্তায় পড়ে যাওয়ার কোন ব্যাপার নেই।

রাস্তায় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ি

এবারের ছাত্র বিক্ষোভই কি সরকারকে সবচেয়ে বেশী নাড়া দিয়েছে? ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা আসার দুই মাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকার মুখোমুখি হয়েছিলো দেশের ইতিহাসের ভয়াবহ ঘটনাগুলোর একটি – বিডিআর বিদ্রোহের। এরপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের বিরোধী দলহীন নির্বাচন, হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরে অবস্থান, ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং সবশেষ চলতি মাসের দ্বিতীয় দফার কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো ঘটনাগুলোতে সরকারকে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। তবে আগের ঘটনাগুলোতে প্রাণহানির সংখ্যা ও সহিংসতার মাত্রা এবারের চেয়ে অনেক কম ছিলো এবং সেগুলো মোকাবেলায় সরকারকে এবারের মতো ‘চিন্তিত’ মনে হয়নি বলে বলছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। এবারই প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরাসরি ‘স্বৈরাচার’ আখ্যা দিয়ে শ্লোগান দেয়া হয়েছে বেশ কিছু মিছিলে, যা আগে শুধু বিএনপি নেতাদের কন্ঠেই শোনা যেতো। যদিও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মি. নাছিম বলছেন, এসব শ্লোগান বিএনপি-জামায়াত আগে থেকেই দিয়ে আসছে, যা তার মতে বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করেনি। “এগুলোর কোন রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই।” বলে তিনি মনে করেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শারমীন আহমেদ বলছেন, বিডিআর বিদ্রোহ থেকে শুরু করে চলমান কোটা আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনাই রাষ্ট্রযন্ত্রকে নাড়া দিয়ে গেছে। “২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন সরকারকে সরাসরি ছাত্রদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছে। তবে অন্য অনেক ফ্যাক্টর আর হতাহতের সংখ্যা বিবেচনায় নিলে এবারের ঘটনাই সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে সরকারের সামনে আবির্ভূত হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি। আরেকজন বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক থাকলেও এবারের ঘটনাপ্রবাহ ছিলো জনগণকে অগ্রাহ্য করে ক্ষমতায় থাকার যে চিন্তা, তারই পাল্টা প্রতিক্রিয়া। “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ বিতাড়িত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও সরকারকে মনে হচ্ছিলো তারা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাদের এতদিনকার সুসংহত যে অবস্থান সেটিকেও কিছুটা নড়বড়েই মনে হচ্ছিলো তখন," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন