Top News

রবীন্দ্রনাথের জামাই ষষ্ঠী ।

চারবেলাই চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় এর আয়োজন- তবে তার মধ্যেও দুপুর বেলার খাবারটাই তো আসল খাওয়া, সেই খাওয়া খেতে বসেছে জামাতা বাবাজীবন। তত্ত্বাবধানে স্বয়ং শ্বশ্রুমাতা।
ভাতটা ভেঙে ডাল ঢালবার আগে শাশুড়ি মৃদু আপত্তি করে উঠলেন- আগে তেতো দিয়ে খাও। 
তেতো? কোথায় তেতো? জামাই বাবাজীবন অবাক।
প্রথম বাটিটা শাশুড়ি আঙুল দেখিয়ে দিকনির্দেশ করলেন।
ওহো, আমি বুঝতে পারিনি। একটু মেখে মুগ্ধ হয়ে বললেন- উচ্ছে আছে বুঝতে পারছি, তেতো ভাবটাও আছে- কিন্তু বেশ অন্যরকম হয়েছে তো।
আর একটা তেতোও আছে। ঘি করলা।
ঘি করলা?
ওই যাকে তোমরা কলকাতার লোক কা৺করোল বলো।
তিক্ত পর্ব শেষ হলে জামাই খেলেন  নারকেল দিয়ে সোনামুগের ডাল আর ভাত,  সঙ্গে কয়েকপদ ভাজা। আলু ভাজা, কুমড়ো ভাজা, পটল ভাজা, বেগুন ভাজা।

এরপরে তরকারির পালা।
এটা তো মোচা মনে হচ্ছে।
 হ্যাঁ, মোচাই তো? তুমি খাবে না? 
কেন খাব না, আমি তো এখন নিরামিষ খেতেই ভালোবাসি।
বড় তৃপ্তির সঙ্গে জামাতা মোচা ভক্ষণ সমাপ্ত করলেন।
এইটা ?
ওটা তো লাউ দিয়ে ছানা দিয়ে একটা নতুন রকমের তরকারি। 
তাই নাকি? সাগ্রহে জামাতা বাবাজীবন সামান্য ভাত দিয়ে মেখে খেয়ে মুগ্ধ হয়ে বললেন- বাহ্, এটাও ভারী সুন্দর হয়েছে, বড় তৃপ্তি পেলাম।

দীর্ঘ দেহের অধিকারী জামাতা বাবাজীবন কিন্ত  পরিমাণে খুবই স্বল্পাহারী। ভাতের পরিমাণ দেখলে কোন ছোট পাখির আহার বললেই ভুল হবে,কিন্তু বেশ কয়েক রকম পদ রান্না না হলে তার মন ভরে না। আজ তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অনেকদিন পরে ভারী তৃপ্তি করে খাবার খাচ্ছে!
 
আচ্ছা, এটা?
এটাতো চৈ দিয়ে কৈ মাছ। 
মাছ ? কিন্তু- আমি তো, আমি তো এখন একদম আমিষ খাই না।
খাবে না? শাশুড়ি মায়ের মুখ কালো হয়ে গেল। আমি কত কষ্ট করে বানালাম চৈ দিয়ে কৈ মাছ, আর তুমি খাবে না? ওই জিনিসটা তো তোমাদের শহরে পাওয়া যায় না। আচ্ছা, থাক তাহলে- আমি সরিয়ে নিচ্ছি। 

জামাতা একটু চুপ করে রইলেন, মাথানিচু করে কী যেন ভাবলেন তারপর বললেন- থাক। সরানোর দরকার নেই, আমি খেয়ে নিচ্ছি। 
খেতে খেতে অস্ফুটে বললেন -হ্যাঁ ,এই রান্নাটা আমি আগে ওর কাছে খেয়েছি। ঠিক এমনটিই।

একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল জামাতার ভৃত্য উমাচরণ। সে বড়ই অবাক হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো- দ্যাখো দেখি  বাবামশাই এর কান্ডখানা। মা ঠাকরুণ চলে যাওয়ার পরে আমরা এত সাধ্যিসাধনা করেও ওনাকে একফোঁটা আমিষ খাওয়াতে পারতাম না, আর আজকে যেই শাশুড়ি বলেছে অমনি মাছটা খেয়ে নিলেন!

সময়টা উনিশশো তিন। 
অবিভক্ত বাংলাদেশ।
শাশুড়ি দাক্ষায়ণী দেবী। 
জামাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন