দলিত মুসলিমরা সত্যি কি সংরক্ষণের রাজনীতির বলি ? আজ ওয়েস্ট বেঙ্গল মুসলিম এসোসিয়েশনের তরফ থেকে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়। যেখানে বক্তা ছিলেন অশোক গাঙ্গুলি ( প্রাক্তন বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট ), এন্তাজ আলী শাহ ( প্রাক্তন চেয়ারম্যান , সংখ্যালঘু কমিশন ) এছাড়াও আরো অনেকে। দেখুন এই সাংবাদিক সম্মেলনের পরে প্রেস রিলিজে কি কি জানালো ওয়েস্ট বেঙ্গল মুসলিম এসোসিয়েশন। প্রেস রিলিজে বলা হয় “যারা অজস্র মোটা দাগের নন-ইস্যু বা নন-সেন্স ইস্যু নিয়ে এত সরব, অথচ তাদেরকেও দুধেল গাই বা রসালো আম বললে বিস্ময়করভাবে তারা এত নীরব। যাদের বৃহৎ অংশ ক্ষমতায়নের প্রকৃত মানদন্ড কোনটি, মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার মতো বাঁচা কোনটি?- আজও সেটাই বুঝে উঠতে পারলো না। যাদের প্রায় দশ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণ থাকার পরেও সরকারি চাকরিতে কোথাও তারা দুই শতাংশ বা কোথাও চার শতাংশ। কি কারণে ? এই সত্য তারা বুঝে উঠতেই পারলো না। আজও শিখলো না হাতে মারা আর ভাতে মারা কাকে বলে।
“উন্নয়নের সকল মানদণ্ডে গোটা দেশের মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়ারা হলেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলমানরা।”- সাচার কমিশন চোখে আঙ্গুল দিয়ে এই সত্য দেখিয়ে দেওয়ার পরও-এরা বুঝলো না প্রায় আঠারো বছর পরেও বেছে বেছে মুসলিম এলাকা বা মুসলিম গরিষ্ঠ জেলাগুলোতেই আনুপাতিক হারে স্কুল, কলেজের সংখ্যা কেন এখনও এত কম? কেন ওদের এত এত অনুপাত, জেলখানাতেই খায় ভাত? তাই তাদের সংরক্ষণের সুযোগ আবার নিভে গেলেও কার যাবে জাত? তাদের হজ হাউস, পীরের দরগা, ইমাম ভাতা, আলিয়া, মাদ্রাসা, কবর ঘেরা, ইদের সভা, ইফতার পার্টি, বিশেষ মাংস খাওয়া, আরাবুল, শাহাজাহান, শওকত, জাহাঙ্গীরদের নেওয়া, জেলখানা, গুলি-বোমা মারা এবং মরা আর লেঠেল বাহিনী হওয়া, ধর্মীয় শুড়সুড়ি দেওয়া, ইনসাল্লা- ইললাল্লা গাওয়া, খোদা হাফেজ কওয়া, হিজাব, মাথায় কাপড় আছে তো? ব্যাস, তাহলেই হবে।
তাই দেশের আইনকে গঙ্গায় ভাসিয়ে, শুধু সস্তা ভোটের পরশ মাখিয়ে, পরম অযত্নে তাদের জন্য ওবিসি আইন হল। আর স্বাভাবিক কারণেই বারো বছর পর কোর্টের রায়ে জেলে গেল। সুতরাং খেলা হল। ভোট হল। আম হল। আমের আঁটিও হল। গাই হল। গাইয়ের দুধ হল। চা খেল। যথাসময়ে ভাঁড়টি ডাস্টবিনে গেল। ওদের গায়ে, পেটে, পিঠে তো আগুন লেগেই আছে । সর্বদা দেগেই আছে। সংরক্ষণ হারালে তারা আর কত নামবে নীচে? তাহলে সংরক্ষণের সবটাই কি পুরোপুরি মিছে? নাকি সংশোধিত সংরক্ষণের কোনও বৈধতা আছে? বিশেষত সুপ্রিম কোর্টের কাছে? ওবিসি জাতি সংক্রান্ত বিধি মেনে, পদ্ধতি-প্রকরণ মেনে, প্রকৃত সমীক্ষা, শুনানি সামনে এনে? জানি, ইসলামে মানুষের মাঝে নেই কোনও ভেদাভেদ, উঁচু-নীচু জাত-পাত। কিন্তু তাদের আর্থ সামাজিক মানদণ্ডে, তাদের ধর্মান্তরিত হওয়ার মানদণ্ডে বা নৃতাত্ত্বিক মানদণ্ডে? সেই অনগ্রসর দলিত কামার, কুমোর, জেলে যে চার-পাঁচ প্রজন্ম আগে অমুসলিম ছিল, এখন মুসলিম হলে? তাদের সকল অনগ্রসরতা আরও প্রকট হয়ে আজও রয়ে গেলে? ন্যায় ও মানবিক যুক্তির কাছে, ধর্ম নয়, আর্থ-সামাজিক মানদণ্ডে সংবিধানসম্মত সংশোধনের কি কোনও সুযোগ আছে? কোথাও কি কোনও বৈধতা আছে? বাস্তবে স্বাধীনতার এতদিন পরে দেশে কোনও জাতি বা শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণের কি কোনও প্রয়োজন আছে? যদি থাকে– প্রকৃত অনগ্রসর আরও কিছু মানুষ কেন দূরে থাকে? কোন কোন দল বা রাজনৈতিক ব্যবসায়ী এই সব মূল্যায়ন না করে শুধু ভোটের গান গায় আর নাচে।
ক্ষমতায়নের ছিটেফোঁটা ওদের দিতে হয় পাছে। ওরা যত বুঝবে, যত জানবে, তত যে উঠবে ক্ষমতায়নের গাছে। তাহলে মন্ডল কমিশন, সাচার কমিশন, রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের দোহাই দিয়ে কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানায় অহিন্দুদের সংরক্ষণ কেন এত কানে বাজে? আসুন — আমরা এ সবের সুলুক সন্ধানে লেগে পড়ি কাজে? আজ, ২৯ মে, ২০২৪-এ প্রেস ক্লাব কলকাতায় অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট বেঙ্গল মুসলিম এসোসিয়েশনের সেমিনার ও প্রেস কনফারেন্স- এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে, সরকার ও সমাজকে বার্তা দিতে এই অনুষ্ঠিত করেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন