Top News

Sonagachi: সোনাগাছিতে থাবা বসাচ্ছে প্রোমোটার, তৈরি করতে চায় ফ্ল্যাট, কোথায় যাচ্ছেন যৌনকর্মীরা?

 


ধীরে ধীরে আবছা হয়ে যাচ্ছিল পেশা। রোজগার কমছিল। এই পেশায় আসার প্রবণতাও কমছিল অনেকে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে অতিমারি করোনা। করোনা পরিস্থিতে মানুষ খুব আগ্রহেই বেঁচে নিয়েছে এই পেশা। আবারও আলোর মুখ দেখছে সোনাগাছি। ব্যবসা বেড়েছে চতুর্গুণ। আর বদলেছে প্রেক্ষাপটও। একটা সময়ে সেখানকার বাসিন্দারাই বলতেন, তাঁরা জোরের শিকার। 

অর্থাত্‍ ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁদের ঘনিষ্ঠ কেউ এই পেশায় নামিয়েছিলেন তাঁদের। কারোর বাবা, কারোর স্বামী, কারোর প্রেমিক- তাঁদের হাত ধরেই একদিন সেই গলি মাড়িয়েছিলেন তাঁরা। তবে সোনাগাছিতে এখন নজর পড়েছে এক বিশেষ শ্রেণির। ২০১৫ সালেই অল জজিরায় প্রকাশিত সমরজিত্‍ জানা এক সাক্ষাত্‍কারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, সোনাগাছিই যে মানুষগুলোর আবাস, তাঁরা আজ সঙ্কটে। কারণ এখানে নজর পড়ছে এক বিশেষ শ্রেণির। আজ, ২০২৪ সালেও সে আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তাই জানালেন দুর্বারের সেক্রেটারি।


সরু গলি। দু’ধারে শ্যাওলাপড়া নর্দমা। ছোট্ট ছোট্ট এক কামরার ঘর, টিনের দরজা। কোনটার দেওয়াল দিয়ে আবার ঝরে পড়ছে চাঙর। একটা স্যাতস্যাতে দেওয়াল। অভিযোগ, অতি নাগরিক সমাজে, নগরোন্নয়নের যুগে প্রোমোটারদের নজরে পড়েছে সেই সোনাগাছি। সোনাগাছির সেই বাড়ি, যেখানে কোনও কোনও ঘরে ইটের পাজর বেরিয়ে গিয়েছে, খসে পড়ছে চাঙর, সেই ঘরগুলোতে এবার প্রলেপ পড়তে চলেছে নগরোন্নয়নের। সোনাগাছির আশপাশে অনেক ফ্ল্যাট হয়েছে। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সেক্রেটারি বিশাখা লস্কর জানাচ্ছেন, সোনাগাছির আশপাশে প্রচুর ফ্ল্যাট উঠেছে। এই এলাকার ল্যান্ড লর্ডরা যদি জমি প্রোমোটারদের হাতে দিয়ে দেন, তাহলে এখানেও ফ্ল্যাট হতেই পারে। তবে এখনই এই ধরনের প্রবণতা খুব বেশি করে দেখা যাচ্ছে না।

তাহলে সোনাগাছির বাসিন্দারা কোথায় যাবেন? দোলাচল রয়েছেই। এই আশঙ্কা অবশ্য আজ থেকে ৯-১০ বছর আগেই দুর্বারের চিফ অ্যাডভাইজার সমরজিত্‍ জানা করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘সোনাগাছি আস্তে আস্তে আবছা হয়ে যাচ্ছে। নজর পড়ছে অন্যদের। ‘

শেষ দু-তিন বছরে যেভাবে জমির দাম বাড়ছে, তাতে এই এলাকায় চড়া দাম উঠবে জমির। তাই তাতে নজর প্রোমোটারদের। কিন্তু সোনাগাছিই যাঁদের সব, যাঁদের আবাস, যাঁদের বছরের পর বছর মাথা গোঁজার ঠাঁই, যাঁদের অন্ন সংস্থান- তাঁদের কী হবে?

বছর পঞ্চান্নর এক মহিলা, নাম পূর্ণিমা চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘ ১৩-১৪ বছর ধরে সোনাগাছিই যাঁর সব। অল জজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্‍কারে তিনি বললেন, “এটাই তো আমাদের আবাস। আমাদের ভালোবাসার মানুষই তো একসময়ে এখানে আমাদের রেখে গিয়েছিলেন। এখন এটাই আমাদের আসাব। শরীর বন্ধক রেখে আমি ভাসবাসার মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়েছি। কিন্তু আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই-ই এখন অন্যদের নজরে।” কথাগুলো বলতে বলতে ঝাপসা হয়ে আসে তাঁর চোখ। বছর পঞ্চান্নর সেই মহিলাকে ভালোবেসে তাঁর জুনিয়ররা কেউ ডাকেন ‘নায়িকা’, কেউ বলেন, ড্রিম গার্ল! তাঁর পাশেই ছিলেন আরেক মহিলা। বয়স আরেকটু কম। নাম গীতা দাস। তিনি বললেন, “আমরা আমাদের আপনজনদের ভালো রাখতেই তো এখানে থাকি। কাজ করি। আমাদের পুঁজি বলতে শরীর। আর সেই পুঁজিকে কাজে লাগিয়েই আপনজনদের ভবিষ্যত্‍ সুনিশ্চিত করেছি। তাতে আমাদের বলতে লজ্জা নেই।”

দুর্বারের সেক্রেটারি বিশাখা লস্কর অবশ্য জানাচ্ছেন, “এখনই ভয় পাওয়া মতো কিছু হয়নি। সোনাগাছির আশপাশে আর কোনও ফাঁকা জায়গা সেভাবে পড়ে নেই। ফ্ল্যাট উঠছে। তবে এই জমি প্রোমোটারদের হাতে যাবে কিনা, সেটা ল্যান্ড লর্ডদের ওপর নির্ভর করছে। আশার কথা এটাই, এখন আরও বেশি মহিলা স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসছেন। আর তাঁদের একটাই বক্তব্য, এটা তাঁদের পার্ট টাইম জব। যে টাকা সংসারেরই কাজে ফুরোয়।”


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন